মুক্তিযুদ্ধের সময় দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত প্রতিবেদনই কাল হলো
৭১-এর ওই মানবতাবিরোধী অপরাধীদের
নান্দাইল নিউজ ডেক্স :
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় অস্বীকার
করেও পার পাননি ‘অপরাধী দল’ জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। দলটির মুখপত্র দৈনিক
সংগ্রামকেই তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। আর রায়েও মুক্তিযুদ্ধের সময় দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন উদ্ধৃত
করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এসব প্রতিবেদনে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী
বিভিন্ন বক্তব্য আর দম্ভোক্তিই শেষ পর্যন্ত কাল হয়েছে জামায়াত নেতাদের।
বিশেষ করে জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম
আযম ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রায়ে বেশি করে ফুটে উঠেছে দৈনিক
সংগ্রামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রভাব।
গত সোমবার গোলাম আযমের রায় দেওয়ার প্রাক্কালে
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর বলেছিলেন, আমরা অন্য যে মামলাগুলো পরিচালনা করছি, তার চেয়ে এই মামলা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।এ মামলায় প্রসিকিউশন আমাদের কাছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও দালিলিক সাক্ষ্য দিয়েছেন। বিভিন্ন পত্রিকার ক্লিপিংস দিয়েছেন। সেগুলোতে আমরা দেখতে
পাই, তৎকালে তিনি (গোলাম আযম) কোথায় কার সঙ্গে দেখা করেছেন,
পরামর্শ- আলোচনা করেছেন, কর্মীদের পরামর্শ দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন।
প্রসিকিউশন যেসব কাগজ দাখিল করেছেন আমরা মনে
করি, আরও কিছু কাগজপত্র দিলে ভালো হতো। আমরা রেফারেন্স বুক হিসেবে তেমন কিছু পাইনি। শুধু স্বাধীনতার দলিলপত্র নামের একটি বই দাখিল করা হয়েছে। ৪২ বছরে এ বিষয়ে আরও অনেক বই লেখা হয়েছে যেগুলো পেলে আমাদের সুবিধা হতো।
গোলাম আযমের রায়ে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালের ২০ জুন দৈনিক সংগ্রামের খবরে বলা হয়- রাওয়ালপিন্ডিতে
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর গোলাম আযম প্রেস বিফ্রিং করেন। তিনি বলেন, কেবল দেশ প্রেমিকদের সাহায্যে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের
দমন করা সম্ভব।
১৯ জুন সংগ্রামে প্রকাশিত অপর এক খবরে লাহোর
বিমানবন্দরে গোলাম আযমের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এখনো আসেনি।
‘সামরিক হস্তক্ষেপ ছাড়া দেশকে রক্ষা করার বিকল্প ছিলনা: গোলাম
আযম’ শীর্ষক শিরোনামে ২২ জুন আরেকটি খবর প্রকাশিত
হয়।
২৩ জুনের খবরে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানিরা সর্বদাই পশ্চিম পাকিস্তানি ভাইদের সঙ্গে
একত্রে বসবাস করবে।
৮ জুলাই এর পত্রিকায় বিরাট জনসমাবেশে গোলাম
আযমের উদ্ধৃতিতে ‘মুজিব ও আওয়ামী লীগ জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা
করছে’ শীর্ষক প্রতিবেদন ছাপা হয়।
২৭ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী,
পেশোয়ারে সাংবাদিক সম্মেলনে গোলাম আযম বলেন- পূর্ব পাকিস্তানের
জনগণ বিদ্রোহ করেনি।
১৭ সেপ্টেম্বরের সংখ্যায় বলা হয়, বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে গণজমায়েতে অধ্যাপক গোলাম আযম বলেন-বাঙালি
মুসলমানদের অস্তিত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে হলে পাকিস্তানের সংহতি অবশ্যই টিকিয়ে রাখতে হবে।
রায়ে আরো বলা হয়, একাত্তরের ১৯ জুলাই সংগ্রাম-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, একাত্তরের ১৬ জুলাই রাজশাহীতে দেওয়া শান্তি কমিটির এক সভায় গোলাম আযম বলছেন- হিন্দুরা
সব সময় মুসলমানের শত্রু, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে
বন্ধুত্বের কোনো প্রমাণ নেই। এ ধরনের হিংসাত্মক
বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে হিন্দুদের প্রতি আসামির বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িক অনুভূতি প্রকাশ
করে, যাতে একই সঙ্গে রয়েছে এই ধর্মীয় গোষ্ঠীকে দেশ থেকে বিতাড়ন বা
ধ্বংসের গূঢ় ইচ্ছা। অথচ উপমহাদেশের ইতিহাস বলে, গত এক হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলে হিন্দু-মুসলমান শান্তিপূর্ণভাবে
ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে বসবাস করছে।
মুজাহিদের রায়ে, ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল দৈনিক সংগ্রামের খবরে বলা হয়-২২ এপ্রিল (১৯৭১) তারিখে ময়মনসিংহে
জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা ও কর্মীদের এক সভা হয়। তাতে সভাপতিত্ব করেন মুহম্মদ আশরাফ হোসাইন। সভায় উপস্থিত ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদ।
ওই সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে আলী আহসান মুজাহিদ
বলেন, আল বদর একটি নাম, একটি বিস্ময়! আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী সেখানেই থাকবে
আল বদর। মুক্তিবাহিনী তথা ভারতীয় চরদের কাছে আল বদর হবে সাক্ষাৎ আজরাইল।
রায়ে ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামের
আর একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়। যাতে জামায়াত নেতা
মুজাহিদ ও মীর কাশেম আলী ভারতীয় গুপ্তচরসহ দুশমনদের খতমের জন্য যুবসমাজের প্রতি আহবান
জানান। (সংগৃহীত)