WELCOME TO NANDAIL NEWS - REFLECTION OF TIME - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ -সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ -সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০১৩

তাজা সব খবর জানতে www.shomoybd.com লগইন করুন

মুক্তিযুদ্ধের সময় দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত প্রতিবেদনই কাল হলো ৭১-এর ওই মানবতাবিরোধী অপরাধীদের

নান্দাইল নিউজ ডেক্স :
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় অস্বীকার করেও পার পাননি অপরাধী দল জামায়াতের শীর্ষ নেতারাদলটির মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামকেই তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেআর রায়েও মুক্তিযুদ্ধের সময় দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন উদ্ধৃত করেছেন ট্রাইব্যুনালএসব প্রতিবেদনে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য আর দম্ভোক্তিই শেষ পর্যন্ত কাল হয়েছে জামায়াত নেতাদের

বিশেষ করে জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রায়ে বেশি করে ফুটে উঠেছে দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রভাব

গত সোমবার গোলাম আযমের রায় দেওয়ার প্রাক্কালে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর বলেছিলেন, আমরা অন্য যে মামলাগুলো পরিচালনা করছি, তার চেয়ে এই মামলা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমএ মামলায় প্রসিকিউশন আমাদের কাছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও দালিলিক সাক্ষ্য দিয়েছেনবিভিন্ন পত্রিকার ক্লিপিংস দিয়েছেনসেগুলোতে আমরা দেখতে পাই, তৎকালে তিনি (গোলাম আযম) কোথায় কার সঙ্গে দেখা করেছেন, পরামর্শ- আলোচনা করেছেন, কর্মীদের পরামর্শ দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন

প্রসিকিউশন যেসব কাগজ দাখিল করেছেন আমরা মনে করি, আরও কিছু কাগজপত্র দিলে ভালো হতোআমরা রেফারেন্স বুক হিসেবে তেমন কিছু পাইনিশুধু স্বাধীনতার দলিলপত্র নামের একটি বই দাখিল করা হয়েছে৪২ বছরে এ বিষয়ে আরও অনেক বই লেখা হয়েছে যেগুলো পেলে আমাদের সুবিধা হতো

গোলাম আযমের রায়ে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালের ২০ জুন দৈনিক সংগ্রামের খবরে বলা হয়- রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর গোলাম আযম প্রেস বিফ্রিং করেনতিনি বলেন, কেবল দেশ প্রেমিকদের সাহায্যে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন করা সম্ভব

১৯ জুন সংগ্রামে প্রকাশিত অপর এক খবরে লাহোর বিমানবন্দরে গোলাম আযমের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এখনো আসেনি

সামরিক হস্তক্ষেপ ছাড়া দেশকে রক্ষা করার বিকল্প ছিলনা: গোলাম আযম শীর্ষক শিরোনামে ২২ জুন আরেকটি খবর প্রকাশিত হয়

২৩ জুনের খবরে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানিরা সর্বদাই পশ্চিম পাকিস্তানি ভাইদের সঙ্গে একত্রে বসবাস করবে

৮ জুলাই এর পত্রিকায় বিরাট জনসমাবেশে গোলাম আযমের উদ্ধৃতিতে মুজিব ও আওয়ামী লীগ জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে শীর্ষক প্রতিবেদন ছাপা হয়

২৭ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পেশোয়ারে সাংবাদিক সম্মেলনে গোলাম আযম বলেন- পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিদ্রোহ করেনি

১৭ সেপ্টেম্বরের সংখ্যায় বলা হয়, বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে গণজমায়েতে অধ্যাপক গোলাম আযম বলেন-বাঙালি মুসলমানদের অস্তিত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে হলে পাকিস্তানের সংহতি অবশ্যই টিকিয়ে রাখতে হবে 

রায়ে আরো বলা হয়, একাত্তরের ১৯ জুলাই সংগ্রাম-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, একাত্তরের ১৬ জুলাই রাজশাহীতে দেওয়া শান্তি কমিটির এক সভায় গোলাম আযম বলছেন- হিন্দুরা সব সময় মুসলমানের শত্রু, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বন্ধুত্বের কোনো প্রমাণ নেইএ ধরনের হিংসাত্মক বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে হিন্দুদের প্রতি আসামির বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িক অনুভূতি প্রকাশ করে, যাতে একই সঙ্গে রয়েছে এই ধর্মীয় গোষ্ঠীকে দেশ থেকে বিতাড়ন বা ধ্বংসের গূঢ় ইচ্ছাঅথচ উপমহাদেশের ইতিহাস বলে, গত এক হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলে হিন্দু-মুসলমান শান্তিপূর্ণভাবে ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে বসবাস করছে

মুজাহিদের রায়ে, ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল দৈনিক সংগ্রামের খবরে বলা হয়-২২ এপ্রিল (১৯৭১) তারিখে ময়মনসিংহে জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা ও কর্মীদের এক সভা হয়তাতে সভাপতিত্ব করেন মুহম্মদ আশরাফ হোসাইনসভায় উপস্থিত ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদ

ওই সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে আলী আহসান মুজাহিদ বলেন, আল বদর একটি নাম, একটি বিস্ময়! আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী সেখানেই থাকবে আল বদরমুক্তিবাহিনী তথা ভারতীয় চরদের কাছে আল বদর হবে সাক্ষা‍ৎ আজরাইল

রায়ে ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামের আর একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়যাতে জামায়াত নেতা মুজাহিদ ও মীর কাশেম আলী ভারতীয় গুপ্তচরসহ দুশমনদের খতমের জন্য যুবসমাজের প্রতি আহবান জানান (সংগৃহীত)


বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৩


'তেঁতুল' নিয়ে মুখ খুললেন তসলিমা নাসরিন

নান্দাইল নিউজ ডেস্ক:
আল্লামা আহমেদ শফির সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত ভিডিও টেপ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন বিতর্কিত ও নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিননিচে নান্দাইল নিউজের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো:

বাংলাদেশ থেকে খুব কমই ফোন আসেবছরে একটি কিংবা দুটিমাঝে মাঝে নিজেই আঁতকে উঠিজন্মেছি, ও দেশেই কাটিয়েছি শৈশব-কৈশোর-যৌবনও দেশেই আছে আত্মীয় স্বজন, খেলার সাথী, একসময়ের সহপাঠীরা, সহকর্মীরা, লেখক-বন্ধুরা, অনুরাগী পাঠকেরাদিব্যি ভুলে গেছে সবাই!

তা যাক, আমিও ও নিয়ে দুঃখ করতেও অনেকদিন ভুলে গেছিআজ কিন্তু ফোন আসা বা না আসা নিয়ে লিখতে বসিনিলিখছি, কারণ বিকেলে একজন ফোন করেছিল দেশ থেকেমৌলবাদ বিরোধী আন্দোলনে জড়িতশাহবাগেও ছিলআমার নিষ্ঠ পাঠকবন্ধুবললো, ‘আপনি কিছু লিখছেন না কেন, এই যে মেয়েদের তেতুঁলের সঙ্গে তুলনা করলো আল্লামা শফীআমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আল্লামা শফী কে, শুনি?’ কথোপকথনটা তারপর এভাবে এগোলো

-হেফাজতে ইসলামের আমির

-হেফাজতে ইসলামটা কী?

-একটা মৌলবাদী দলকয়েক লক্ষ লোকের মিছিল নামিয়েছিল ঢাকায়এখন প্রচুর প্রতিবাদ হচ্ছে তার বক্তব্য নিয়েআপনার লেখা মিস করছিলিখুন

-কেন প্রতিবাদ হচ্ছে? কী বলেছে সে?

-জনসভায় বলেছে, 'আপনারা মেয়েদের স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে লেখাপড়া করাইতেছেনকেন করাইতেছেন? তাদের ক্লাস ফোর-ফাইভ পর্যন্ত পড়াইবেন যাতে বিবাহ শাদী দিলে স্বামীর টাকা-পয়সার হিসাব রাখতে পারেআপনার মেয়েকে স্কুল-কলেজ, ভার্সিটিতে পড়াইতেছেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করতেছেনকিছুদিন পর আপনার মেয়ে, নিজে নিজে একটা স্বামী জোগাড় কইরা লাভ ম্যারেজ, কোর্ট ম্যারেজ কইরা চইলা যাবেআপনার কথা স্মরণ করবে নামহিলাদের ক্লাসে সামনের দিকে বসানো হয়, পুরুষরা কী লেখাপড়া করবে?' আরও জঘন্য কথা বলেছে  

-যেমন?

-বলেছে, ‘আপনার মেয়েকে কেন দিচ্ছেন গার্মেন্টসে কাজ করার জন্য? চাকরি তো অনেকে করতেছেনআপনি নিজে করতেছেন, আপনার বউ করতেছে, মেয়েরা করতেছেকিন্তু তারপরওতো পারতেছেন নাখালি অভাব আর অভাবআগের যুগে শুধু স্বামী রোজগার করত আর সবাই মিইলা খাইতএখন বরকত নেইসবাই মিল্লা এত টাকা কামাইয়াও তো কুলাইতে পারতেছেন নাগার্মেন্টসে কেন দিচ্ছেন আপনার মেয়েকে? সকাল ৭-৮টায় যায়, রাত ১০-১২টায়ও আসে নাকোন পুরুষের সঙ্গে ঘোরাফেরা করে, তুমি তো জান নাকতজনের সঙ্গে আপনার মেয়ে চলছে তা তো জানেন নাজেনা কইরা টাকা কামাই করতেছে, বরকত থাকবে কেমনেমেয়েদের কাজ ঘরের ভেতরনারীদের ঘরে থাকতে বলেছে ইসলামতোমরা জাহিলিয়াতের সময়ের মতো বেপর্দায় ঘর থেকে বাইর হইও না, উলঙ্গ অবস্থায় মাঠে-ঘাটে-হাটে আপনারা মহিলারা মার্কেট করতে যাবে নাস্বামী আছে সন্তান আছে তাদের যাইতে বলবেনআপনি কেন যাবেন? আপনি স্বামীর ঘরের মধ্যে থাইকা উনার আসবাবপত্র এগুলার হেফাজত করবেনছেলে-সন্তান লালন-পালন করবেনএগুলা আপনার কাজআপনি বাইরে কেন যাবেন?’

-তাই নাকি?

-বলেছে, ‘জন্মনিয়ন্ত্রণ কেন করেন? বার্থ কণ্ট্রোল কেন করেন? বার্থ কন্ট্রোল হলো পুরুষদের মরদা থাইকা খাসি কইরা ফেলামহিলাদের জন্মদানী সেলাই কইরা দেয়াএরই নাম বার্থ কন্ট্রোলবার্থ কন্ট্রোল করলেও ডেথ তো কন্ট্রোল করতে পারবা নারিজিকের মালিক হচ্ছে আল্লাহখাওয়াইব তো উনিতুমি কেন বার্থ কন্ট্রোল করবা? বড় গুনাহের কাজ এইটাপারলে চাইরটা পর্যন্ত বিবাহ করবাখাওয়াইব তো আল্লাহবার্থ কন্ট্রোল করবা নাএইটা বড় গুনাহের কাজ 

-দেশে এত গরিবআল্লাহ তো ঠিকমতো খাওয়ায় না ওদেরখাওয়ালেও ভালো পুষ্টিকর খাবার, মাছ মাংস এসব তো খাওয়াতে পারে নাওরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তবে খাবার যোগাড় করেআর তা না হলে না খেয়ে মরেওদিকে আল্লাহ আবার ধনীদের পাতে খুব সুস্বাদু খাবার ঢেলে দিচ্ছেনআর কী বলেছে? তেঁতুল টেতুল কী যেন তখন বলছিলে!

-বলেছে, 'মেয়েরা হচ্ছে তেঁতুলের মতোছোট্ট একটা ছেলে তেঁতুল খাইতেছে, তা দেখলে আপনার মুখ দিয়া লালা ঝরবেতেঁতুল গাছের নিচ দিয়া আপনি হাঁইটা যান তাইলেও আপনার লালা ঝরবেদোকানে তেঁতুল বিক্রি হইতে দেখলেও আপনার লালা ঝরবেঠিক তেমনি মহিলাদের দেখলে দিলের মাঝে লালা ঝরেবিবাহ করতে মন চায়লাভ ম্যারেজ কোর্ট ম্যারেজ করতে মন চায়দিনরাত মেয়েদের সঙ্গে পড়ালেখা করতেছেন, আপনারা দিল ঠিক রাখতে পারবেন নারাস্তাঘাটে মেয়েদের সঙ্গে চলাফেরা করতেছেন, আপনার দিল ঠিক রাখতে পারবেন নাযতই বুজুর্গ হন আপনার মনের মাঝে কু খেয়াল আইসা যাবেএইটা মনের জেনা, দিলের জেনাএইটা এক সময় আসল জেনায় পরিণত হবেআপনার রিয়েকশান?

-তেতুঁল আমি খুব পছন্দ করতাম ছোটবেলায়এখনও জিভে জল চলে আসে তেঁতুল দেখলেইএত ফল থাকতে আল্লামা লোকটা তেঁতুল বেছে নিয়েছে কেন? ছেলেরা তো অত তেঁতুল পছন্দ করে নামেয়েরা পছন্দ করেসেক্ষেত্রে বরং কোনও ছেলেকে দেখলে মেয়েদের মনে হতে পারে ছেলেটা তেঁতুলের মতোস্মার্ট হ্যাণ্ডসাম ছেলে দেখলে বরং মেয়েদের লালা আসাটা স্বাভাবিকছেলেদের, ধরা যাক, কোনও কারণে লালা এলোলালা এলে লালা ঝরতে দেওয়াই ভালোবিয়ে করতে মন চাইলে করবেএতে আপত্তিটা উঠছে কেনসেক্স, বিয়ে, এসব তো অন্যায় কোনও কাজ নয়অন্যায় কাজ হল, অন্যের আপত্তি সত্ত্বেও গায়ের জোরে সেক্স করা বা গায়ের জোরে বিয়ে করা

-উফআল্লামা শফীর কথার প্রতিবাদ করুন, সিরিয়াসলি করুন

-একটা অশিক্ষিত মিসোজিনিস্ট কী বললো না বললো, তা নিয়ে অত ভাবছো কেন? ওই ব্যাটাকে এত মূল্য দেওয়ার কী আছে?

-কী বলছেন, এত সব বাজে কথা বলে পার পেয়ে যাবে? আপনি প্লিজ প্রতিবাদ করুন

-পার তো পেয়েই যাবেপ্রতিবাদ করলেও পাবে, না করলেও পাবেলোকটা শুধু বলেছেযা বলেছে, সেই মতো কাজ করে লক্ষ লক্ষ লোক প্রতিদিন পার পেয়ে যাচ্ছেকাউকে তো দোষ দিচ্ছ নাবেচারা আল্লামাকে দোষ দিচ্ছ কেন খামোকা? প্রতিদিন মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মেয়েদের চাকরি করতে দেওয়া হচ্ছে না, বার্থ কন্ট্রোল করতে দেওয়া হচ্ছে না, মেয়েদের দিয়ে পুরুষের ঘর সংসার সন্তান সামলোনার কাজ করানো হচ্ছেপ্রতিদিন ঘরে বাইরে মেয়েরা যৌনবস্তু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেলোকটা এসব কথা না বললেও এভাবেই চলছিল সমাজপুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারণেই তো চলছিললোকটা, আমার মনে হচ্ছে, খুব সৎ লোকপলিটিক্যালি কারেক্ট হওয়ার কায়দাটা এখনও শেখেনিধুরন্দররা ওসব শিখে নেয় আগেভাগেতারপর তলে তলে সমাজটাকে নষ্ট করেআল্লামা কিন্তু নতুন কোনও কথা বলেনিসবার জানা কথাগুলোই বলেছে

-একটা মৌলবাদীকে সৎ লোক বলছেন?

-বলছি কারণ লোকটা যা বিশ্বাস করে, তা অকপটে বলে দিয়েছেসমাজের ভদ্রলোকেরা মনের কথাটা বলে নালুকিয়ে রাখেলুকিয়ে রেখে ওপরে আধুনিক হওয়ার ভাব দেখায়ভাব দেখায় তারা মেয়েদের স্বাধীনতায় আর অধিকারে বিশ্বাস করেটোকা মেরে দেখ কিছুই আসলে বিশ্বাস করে নাআসলে সবাই প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে ওই আল্লামা শফীর আদর্শেই বিশ্বাস করেআল্লামার আদর্শ তো আসলে আল্লাহপাকের আদর্শ, হযরতের আদর্শকোরআনে আছে, শত শত হাদিসেও লেখা আছে এসব কথাচারটে বিয়ের কথা কি আল্লামা প্রথম বললো? ও তো স্বয়ং আল্লাহপাকই বলে দিয়েছেনতারপর ধরো, মেয়েদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার কথা, পর পুরুষের সামনে না যাওয়ার কথাএসব তো হাদিসের কথাঘরের বার না হলে, পর পুরুষের সামনে না গেলে তুমি স্কুল কলেজে যাবে কী করে শুনি, চাকরি বাকরি করবে কী করে! ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করবে, আবার নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করবে, তা তো হয় না! দুটো পরস্পরবিরোধী জিনিস

-দেশের মানুষ তো আল্লামার মতো এত ছোটলোক নয়

-মানুষ আবার দল বেঁধে বড় লোক কখন হলো? হয়তো কেউ কেউ ছোটলোক নয়তবে আল্লামা যা বলেছে, তা বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের মনের কথাহয়তো মেয়েদের ঠিক ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়ানোর বদলে কেউ কেউ ক্লাস এলেভন টুয়েলভ অবধি পড়াতে চায়, কেউ এমএ, বিএ বা তারও বেশি পড়াতে চায়, কেউ কেউ মেয়েরা চাকরি করুক তাও চায়, তারাও দেখ গিয়ে মেয়েদের তেঁতুলের মতোই মনে করছে

-আপনি বলছেন অন্য লোকও মেয়েদের তেঁতুলের মতো মনে করছেশুধু আল্লামা নয়?

-তা তো নয়ইঅধিকাংশ লোকই মেয়েদের তেঁতুলই ভাবেকেন, কত পুরুষ-কবি মেয়েদের কত ফুল-ফলের সঙ্গে তুলনা করেছে, পড়োনি? কমলা, ডালিম, আপেল, পেয়ারা, আনারস, গোলাপ, বেলি আরও কত কিছু বলে ডেকেছে মেয়েদের শরীরের নানা অংশকেকেবল তেঁতুল বললেই রাগ হয়? তেঁতুল খুব সস্তা ফল বলে? দামী ফলের সঙ্গে তুলনা করলে হয়তো এত রাগ হতো নাশুধু ফুল ফল! সবজিও তো আনা হয়েছে তুলনায়পটলচেরা চোখ! শোনো, নারী-পুরুষের যৌন আকর্ষণ থাকাটা অতি স্বাভাবিককিন্তু নারীকে নিতান্তই বস্তু ভাবাটা, যৌন-বস্তু ভাবাটা ঠিক নয়যেন গোটা মানুষটা একটা ভ্যাজাইনা, গোটা মানুষটা একজোড়া স্তন, গোটা মানুষটা ত্বক, নাক চোখ, চুল; আর কিছু নয়যেন মেয়েদের জ্ঞান বুদ্ধি, চিন্তা ভাবনা, ইচ্ছে অনিচ্ছে, নিজস্বতা, স্বকীয়তা, সম্মান, ব্যক্তিত্ব এসব নেই, বা এসব থাকলেও এসবের কোনও মূল্য নেইমেয়েরা যেন নিজের জন্য জন্মায়নি, জন্মেছে পুরুষের জন্য, পুরুষের যৌন তৃষ্ণামেটানোর জন্যতেঁতুলের প্রসঙ্গ তো এলো সে কারণেওই লোক কিন্তু পুরুষকে তেঁতুল বলেনিমেয়েদেরও তো যৌন তৃষ্ণা আছে বাবা! যদি পুরুষের চোখে মেয়েরা তেঁতুলের মতো, মেয়েদের চোখে পুরুষও তো তেঁতুলের মতোকিন্তু এরা মেয়েদের  যৌনতাকে কোনওদিন গুরুত্বপূর্ণ  বলে মনে তো করেই  না, বরং অস্বীকার করে, ওটি থাকলে মেয়েদের বেশ্যা বলে গালাগাল করেএদের চোখে, পুরুষ হচ্ছে ফুলফ্লেজেড হিউম্যান, আর মেয়েরা হচ্ছে সেক্স-অবজেক্টস  কাম স্লেভসপুরুষকে যৌনতৃপ্তি দেওয়ার, পুরুষের সন্তান জন্ম দেওয়ার, সেই সন্তানকে লালন পালন করার, ঘর সংসারের সব কাজকর্ম করার, রান্নাবান্না করার, পরিবেশন করার কাজ ছাড়া তাদের আর কোনও কাজ নেইপু্রুষের মা, স্ত্রী, বোন, কন্যা এসবই হচ্ছে মেয়েদের পরিচয়আর কোনও পরিচয় সমাজের কটা লোক মানে, বলো! পুরুষতন্ত্র হচ্ছে মেয়েদের বন্দি করে রাখার জন্য বোরখার মতো একটা বন্ধ কারাগার

-কেউ তো আল্লামা শফীর মতো এমন আজগুবি কথা আগে বলেনি!

-সবাই বলছেআল্লামা রাখঢাক না করে, একটু অসভ্য ভাষায় বলেছে, এই যাসভ্য ভাষায় সভ্য লোকেরা যখন বলে, ওটা তোমাদের শুনতে অত মন্দ লাগে নাকোরান হাদিসও ভালো করে পড়ে দেখ, এসব কথাই লেখা আছেকোরান হাদিস হচ্ছে কট্টর পুরুষতন্ত্রঠিক আল্লামার ভাষায় কথা বলে, চৌদ্দশ বছর আগে একজন লোক আল্লাহর পেয়ারা বান্দা, বন্ধু, মেসেঞ্জার, রসুল ইত্যাদি বনে গিয়েছিলসেই রসুলকে তোমরা মন প্রাণ ঢেলে শ্রদ্ধা করছো, তাকে বিশ্বাস করছো, আর ঠিক  একই ধরণের কথা বললেও আজ আল্লামা শফীকে বিশ্বাস করছো না, তাকে বরং তোমরা ঘৃণা করছোরীতিমত কন্ট্রাডিকটরিকেন আল্লামাকে নিন্দা মন্দ করছো, সে তো তোমাদের রসুলে করিমের বিশ্বাসের উল্টো কোনও কথা বলেনি! রসুলের কথাগুলোই ইনোসেন্টলি যুগোপযুগী করে রিপিট করেছে আল্লামা

-কী বলছেন?

-হ্যাঁযা বলছি ঠিকই বলছিকী চাও? বৈষম্য নাকি সমতা, বর্বরতা নাকি মানবতা-একটাকে তোমাদের বেছে নিতে হবেধর্মে, সোজা কথা সাফ কথা- সমানাধিকার নেই, সত্যিকার মানবতাও নেইআগেই বলেছি, ধর্ম আগাগোড়াই, মানে টপ টু বটম পুরুষতন্ত্রযদি ইসলামে কারও অবিশ্বাস থাকে তাকে কুপিয়ে মেরে ফেলার কথা লেখা আছেএর চেয়ে  মানবতা বিরোধী কাজ আর কী হতে পারে! অ্যাডাল্টারি করলে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলতে হবে মেয়েদেরমেয়েদের আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে হবেকারণ তাদের দেখলে পুরুষের যৌন-ইচ্ছে জাগতে পারেপুরুষের যৌন ইচ্ছে জাগতেই পারে, জাগুকমেয়েদের যদি একই সঙ্গে সেই ইচ্ছেটা না জাগে, তবে পুরুষকে কণ্ট্রোল করতে হবেএকই রকম মেয়েদের বেলাতেও

-পুরুষরা তো কন্ট্রোল করতে জানে না

-কে বলেছে জানে না? ঠেকায় পড়লে ঠিকই জানেকিন্তু ঠেকা নেই তো এখনপুরুষরা এই সমাজের মাতব্বরমাতব্বরেরা বলে দিয়েছে, যৌনআকাঙ্খা সংযত করার কোনও দরকার নেইতারা যা খুশি করতে পারোযার ওপর ইচ্ছে তার ওপরই ঝাঁপিয়ে পড়ার, ধর্ষণ করার অধিকার তাদের আছেতাদের পেশিতে শক্তি আছে, মেয়েদের ওপর পেশির শক্তি তারা খাটাবেএই শক্তি আল্লাহর দেওয়াজগতটা তাদেরতাদের স্ফূর্তির জন্যকিন্তু তা তো আসলে নয়জগতটা নারী পুরুষ উভয়েরপরস্পরের প্রতি সম্মান না থাকলে জগতটাতো চলবে নাআমরা যত সভ্য হচ্ছি, তত সমাজ পাল্টাচ্ছিআমরা বলে কয়ে নিয়েছি যে আমরা পেশি দিয়ে বা পুরুষাঙ্গ দিয়ে জগত, রাষ্ট্র বা সমাজ চালাবো নাবুদ্ধি দিয়ে চালাবোসুবুদ্ধি দিয়েসুবিবেচনা দিয়ে

-অবশ্য সব পুরুষ এক নয়সব পুরুষই ধর্ষণ করে না

-অবশ্যই সব পুরুষ এক নয়অনেক পুরুষই নারীর সমানাধিকারে বিশ্বাস করেকিন্তু তাদের সংখ্যাটা নিতান্তই কমএই সংখ্যাটা দ্রুত বাড়া উচিতশুধু পুরুষ নয়, নারীর সমানাধিকারে বিশ্বাস করা নারীর সংখ্যাও খুব বেশি নয়ওই সংখ্যাটাও বাড়াতে হবে

-আর আল্লামার কী হবে? ওর অনুসারীর সংখ্যা তো অনেক বেশি

-সে ওর কৃতিত্বতোমরা পিতৃতন্ত্রকে দূর করতে পারোনি বলেই এমন হচ্ছেমানুষকে বিজ্ঞান শিক্ষায় যথেষ্ট শিক্ষিত করতে পারোনি বলে  মানুষ আজ অন্ধত্ব, কুসংস্কার, গোঁড়ামির মধ্যে বড় হচ্ছেসমতা সমানাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে মানুষকে শিক্ষিত করোনি বলে নারীবিরোধিতা, নারী ঘৃণা, পুরুষপ্রাইড ইত্যাদি নিয়ে বেড়ে উঠেছেবেড়ে উঠেছে বলেই সহজেই আল্লামা শফীর কথাগুলো তাদের মনোপুত হয়শফীর প্রতিবাদ করে যত না কাজ হবে, তার চেয়ে বেশি কাজ হবে যদি প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করো মেয়েদের অধিকার সম্পর্কে, মানবাধিকার সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জ্ঞান দিতেইস্কুলে বিজ্ঞান শিক্ষা কম্পোলসারি করোধর্ম শিক্ষা উঠিয়ে দাও ইস্কুলের সিলেবাস থেকেধর্ম শেখার জিনিস নয়ধর্ম বিশ্বাস করার জিনিসহাবিজাবি আজগুবি গপ্প চোখ কান বুজে বিশ্বাস করার জিনিসও ঘরে বসে যত পারো বিশ্বাস করোতবে বিজ্ঞানটা ভালো ভাবে অন্তস্থ করলে ধর্ম থেকে বিশ্বাস উঠবেই এবং এতেই হবে পুরুষতন্ত্রের, ধর্মের, আল্লামা শফীর আর আল্লাহর নবীর আদর্শকে চ্যালেঞ্জ করাশহরের মোড়ে দাঁড়িয়ে, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে চিল্লিয়ে, দু'চারটে কলাম লিখে সমাজটাকে খুব বেশি বদলানো যায় নাসাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছোতে হবে তোমাদেরমুশকিল হল, বছরগুলোকে গড়িয়ে যেতে দিয়েছো, আর এই ফাঁকে  সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে আল্লামারাতাই ডাক দিলে পিঁপড়ের মতো লোক বেরিয়ে আসে রাস্তায়চোখের সামনে কী দ্রুত তৈরি হয়ে গেল একটা গণ্ডমূর্খের সমাজবড় দুঃখ হয়

(মুক্তচিন্তা থেকে সংগৃহীত)