WELCOME TO NANDAIL NEWS - REFLECTION OF TIME - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ -সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ -সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি - স্বাগতম- নান্দাইল নিউজ - সময়ের প্রতিচ্ছবি

সোমবার, ৩ জুন, ২০১৩


সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ-

সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ-
মাত্র দিন চারেকের জন্য শিলং এবং আসাম গিয়েছিলামফিরে এসে শুনি দেশের ১৫ জন পত্রিকা সম্পাদক এক যুক্তবিবৃতিতে জনাব মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চেয়েছেনতাঁরা দাবী করেছেন, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা এবং দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি নামের দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রকাশনা এবং সম্প্রচার আবার শুরু করতে দেওয়া হোকএই যুক্তবিবৃতির পক্ষে যুক্তি হচ্ছে মাহমুদুর রহমান একটি পত্রিকার সম্পাদক, কাজেই তাকে গ্রেফতার করা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থীআর কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই ওই দুই টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছেসরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে
সম্পাদকদের এই যুক্তবিবৃতির বিরুদ্ধে দেশের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী পাল্টা বিবৃতি দিয়ে সম্পাদকদের এই ভূমিকার নিন্দা এবং সমালোচনা করেছেনএর পরপরই বিবৃতিতে স্বাক্ষর দানকারী সম্পাদকদের একজন তাঁর সম্পাদিত পত্রিকায় কেন তিনি এই যুক্ত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সেটা ব্যাখ্যা করলেন
এই চার দিনের মধ্যে এতসব কাণ্ড ঘটে যাবে, বুঝিনিইতোমধ্যে সম্পাদকদের একটি কাউন্সিলও গঠিত হলোতাতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ সবই নির্ধারিত হয়ে গেলযাঁরা এই কাউন্সিলে আছেন, তাঁরা অনেকে অবশ্যই সাংবাদিকতার জগতে বেশ প্রভাবশালী এবং এই প্রভাবের পেছনে বহুবিধ কারণও আছেআমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সম্পাদকদের একটি সংগঠন থাকা উচিতএই সংগঠনটির দায়িত্ব হওয়া উচিত সাংবাদিকতার ভেতরে জমে ওঠা আবর্জনা পরিষ্কারের ক্ষেত্রে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করাএমন একটি গাইডলাইন নির্ধারণ করে দেওয়া, যেখানে নৈতিকতা সততা মানবিক মূল্যবোধ থাকবে, হিংসা-দ্বেষ অসূয়ামুক্ত জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ভূমিকা থাকবেযেখানে সৎ ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিকতার সঙ্গে অসাংবাদিকতা, অপসাংবাদিকতা, কুসাংবাদিকতা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাংবাদিকতা এবং এজেন্ডা  সাংবাদিকতার ব্যবধান সুস্পষ্টভাবে নির্ণিত থাকবেসম্পাদক থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরের সংবাদকর্মীর আচরণ এবং মান, যোগ্যতা এবং যথার্থতা এর আওতাভুক্ত থাকবেএই সংগঠনটির দিকনির্দেশনামূলক ভূমিকা জাতির কাছে প্রতিভাত হবে ঘনঅন্ধকারময় পরিস্থিতিতে আলোকবর্তিকার মতো  কিন্তু অতিশয় অস্বস্তির সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, এই সংগঠনের যাত্রার সূচনা ঘটল কর্দমাক্ত পথে পা রাখার ভেতর দিয়ে
এতখানি রূঢ়ভাবে বলার জন্য আমার অগ্রজ কিংবা অনুজপ্রতীম সম্পাদক সহযাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলছি, মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবি কিংবা দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি এবং আমার দেশ সংক্রান্ত বিষয়ই যদি এই এডিটরস কাউন্সিল গঠনের ভিত্তিভূমি হয়, তা হলে এর প্রতি সাংবাদিক সমাজের কতখানি আস্থা এবং বিশ্বাস থাকবে সেটা অবশ্যই প্রশ্ন করা যেতে পারেআর সম্পাদকদের যুক্তবিবৃতি? এ প্রসঙ্গে আমার একটু স্মৃতিচারণ করার প্রয়োজন হয়েই পড়েছেআমি এখানে কারো নাম উল্লেখ করতে চাই না, শুধু কতিপয় ঘটনা তুলে ধরতে চাই-
২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনাপাঠক নিশ্চয়ই জানেন কী ভয়াবহ ব্যাপারটাই না ঘটেছিল সেদিন! একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে গ্রেনেড দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার নিষ্ঠুর এবং পৈশাচিক পরিকল্পনা কার্যকর করার চেষ্টা হয়েছিল ওই ২১ আগস্টেআমি তখন দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদকহামলার খবর পাওয়ার পর পরই চলে যাই ঘটনাস্থলে, সেখান থেকে বিভিন্ন হাসপাতালেসম্ভবত শ্যামল দত্তকে সঙ্গে নিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবদুর রাজ্জাক, ওবায়দুল কাদের, আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মী হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছেন শুনলাম আইভী রহমানের অবস্থা বেশ খারাপদেখা হলো আহত আলোকচিত্র সাংবাদিক যুগান্তরের গোর্কির সঙ্গেগোর্কি বলছিল, মাত্র তিন চার সেকেন্ড এদিক ওদিক হলে শেখ হাসিনার দেহ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যেত ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর মতোদ্রুত চলে গেলাম ধানমন্ডির ৫ নম্বরে অবস্থিত সুধা সদনে সেখানে বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা রয়েছেন আকস্মিক ঘটনায় তাঁরা স্তম্ভিত, বিস্ময় বিমূঢ়! হাসপাতালে যে সমস্ত নেতাকর্মীর শয্যার পাশে গিয়েছি, তাঁদের মুখে একই কথা- নেত্রীর কাছে যান, তাঁকে বলুন আমরা এখনও বেঁচে আছি
 অনেকে ৭৫-এর ১৫ আগস্টের সঙ্গে ২০০৪-এর ২১ আগস্টের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করেনদুটোই বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংসতম ঘটনা৭৫-এ জাতির জনককে সপরিবারে বিনাশের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ফসলকে তছনছের ব্যবস্থা করা হয়েছিলআর ২১ আগস্টের লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগকে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করাএই দুইয়ের মধ্যে ধারাবাহিক যোগসূত্র আছে
স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বহুমুখী তৎপরতা সেই ৭১-এর বিজয় অর্জনের পর থেকেই সক্রিয় এবং ক্রম সম্প্রসারণশীল  ’৭৫-এ ছিল সরকার উৎখাতের চক্রান্ত, কাজেই সেখানে আমলা রাজনীতিক সামরিক চক্র এবং আন্তর্জাতিক অপশক্তির সম্মিলিত প্রয়াস ছিলআর ২০০৪-এর ২১ আগস্টের ঘটনাটি ঘটিয়েছিল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তিতাদের মুঠোয় তখন আমলা পুলিশ আদালত সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন অর্থাৎ সব কিছুএবং তাদের লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা
যাই হোক, ওই সময় আমার মনে হয়েছিল এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সম্পাদকদের একটি পরিষ্কার ভূমিকা থাকা দরকারআমি একজন প্রভাবশালী সম্পাদককে অনুরোধ করেছিলাম যুক্তবিবৃতি দেওয়ার এবং একটি অভিন্ন সম্পাদকীয় প্রকাশের জন্যপ্রখর যুক্তিবাদী আমার সেই বন্ধু সম্পাদকটি অহমিকাকে মধুর হাসির আচ্ছাদনে মুড়িয়ে বললেন, ‘দেখ বন্ধু, আমি ওইসব জয়েন্ট ভেঞ্চারে বিশ্বাসী নইআমি আমার কাগজে আমার মতো করে বিশ্লেষণ করব, ব্যাখ্যা করব, এমন কি তোমার পত্রিকার চাইতে আরো ভালো করে পরিবেশনও করতে পারব  কিন্তু এভাবে যুক্তবিবৃতির নামে নিজের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করার আমি ঘোর বিরোধীসম্পাদকদের যুক্তবিবৃতি এরপর আর হতে পারেনিশুধু একুশে আগস্টই নয়, হত্যা করা হয়েছে আওয়ামী আমলের সফল অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেবসহ আহসানউল্লাহ মাস্টার, মনজুরুল ইমাম, হুমায়ুন কবির বালু, মানিক সাহা প্রমুখদেরহত্যা করা হয়েছে বিচারকদের দেশে একসঙ্গে ৬৩টি জেলায় বোমা হামলা করা হয়েছে; যশোর, ময়মনসিংহ, সাতক্ষীরায় বোমা হামলা হয়েছে, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে হত্যার জন্য বোমা হামলা হয়েছে; বাংলা ভাই, শায়খ আবদুর রহমানের উত্থান ঘটেছে, সরকারি প্রশাসনযন্ত্র তাদের নগ্নভাবে সহযোগিতা করেছে
২০০১ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর যে ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক হামলায় দলে দলে সংখ্যালঘু  নারী-পুরুষ দেশত্যাগ করেছে সেটাও তো ঘটেছে সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায়সাংবাদিক-লেখকদের ধরে ধরে নির্যাতন করা হয়েছে রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে, বিদেশি সাংবাদিকরাও কারানির্যাতন কিংবা রিমান্ডের হাত থেকে রেহাই পায়নিএমন কি সম্পাদক কিংবা প্রকাশককেও জড়ানো হয়েছে সিনেমা হলের বোমা হামলার মামলায়সেদিনও কিন্তু আমরা সম্পাদকদের কোথাও যুক্তবিবৃতি দেখতে পাইনিসম্পাদকের মতপ্রকাশেরস্বাধীনতাখর্ব হওয়ার আশঙ্কায় কী ? হতে পারে
যখন যুগান্তরপত্রিকায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি, তখনও উদ্যোগ নিয়েছিলাম সাংবাদিক হত্যার এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রশ্নে সম্পাদকদের যৌথ উদ্যোগেরনা, সফল হতে পারিনিকারণ, কোথাও কোথাও সম্পাদক যুক্তিতে, প্রভাবে, প্রচারে এবং সংযোগে আমার মতো অধমের চাইতে অনেক বেশি পারঙ্গমঅনেক প্রবীণ সাংবাদিক এবং সম্পাদককেও দেখেছি তাঁদের কারও কারও কাছে অতিশয় বিগলিত চিত্তে মাথা নাড়তেসমকালপত্রিকায়  সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সময়টা ছিল এক-এগারো পরবর্তী সেনা সমর্থিত সরকারসে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সম্পাদকদের এবং সাংবাদিকদের প্রতি অবজ্ঞাসূচক আচরণ করা হয়েছিল একাধিকবারতখনও উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভেবেছিলামকিন্তু পেরে উঠিনিপরবর্তীতে আমি আমার কালের কণ্ঠকলামের নামে একটি পত্রিকার ঘোষণাপত্র গ্রহণ করি এবং পত্রিকাটি প্রকাশের জন্য অনুকূল বিনিয়োগকারীর অনুসন্ধানে থাকিঘটনাক্রমে একটি বৃহৎ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আমার কালের কণ্ঠপত্রিকায় বিনিয়োগের ইচ্ছে প্রকাশ করেএক পর্যায়ে আমি পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও বিনিয়োগকারীদের মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের অন্যতম অংশীদার পরিচালক হিসেবে কালের কণ্ঠপ্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করিপরবর্তী পর্যায়ে আমি পত্রিকাটির নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ক্রমাগত কোণঠাসা হতে থাকিযে পত্রিকার আংশিক মালিকানাসূত্রেও আমি প্রতিনিধিত্ব করি, সেই পত্রিকার সাংবাদিকতার মান ক্রমাগত এতো বেশি ব্যক্তিস্বার্থ প্রণোদিত হতে থাকে যা আমার পক্ষে বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে সে সময় কিন্তু সম্পাদক মহলের একটি অংশ থেকে আমাকে অলিখিতভাবে ব্রাত্য প্রতিপন্ন করার চেষ্টা হয়েছে
প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতার কণ্টক মুকুটআমার মাথায় চড়িয়ে দেওয়া হয়েছেআমি লিখিতভাবে স্বনামে প্রকাশিত কলামে এই গঞ্জনা মেনে নিয়েছিএক সময় বাধ্য হয়ে আমাকে নিজের শ্রম ও ভালবাসায় তৈরি আত্মজকে পরিত্যাগ করতে হয়েছে পরম যাতনা নিয়েতখনও কিন্তু সম্পাদকদের অবস্থান থেকে সামান্যতম ইতিবাচক শব্দ উচ্চারিত হয়নিযে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষার জন্য আমি আমার নিজের দিকে, বয়সের দিকে, স্বাস্থ্যের দিকে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে, পারিবারিক নিরাপত্তার দিকে একবারও ফিরে তাকাইনি, সেই সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষার কথা বলে আজ যুক্তবিবৃতি দিচ্ছেন পনের/ষোল জন সম্পাদক মাহমুদুর রহমান নামক এক উড়ে এসে জুড়ে বসাভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের মুক্তি দাবী করে? বিবৃতিদাতারা কি জানেন না আমার দেশপত্রিকায়ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকেরপদবীটি আত্মস্থ করে দিনের পর দিন কী কুসাংবাদিকতার বিষ উদ্গীরণ করেছেন মাহমুদুর রহমান? কীভাবে সরাসরি সংবিধানকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন তিনি? এই মাহমুদুর রহমানকে পদবীর কারণে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল জাতীয় সংসদে সংসদীয় কমিটির কক্ষে আয়োজিত সম্পাদকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায়সেখানে সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন বেগম সাজেদা চৌধুরীউপস্থিত ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু সহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যসেখানে ঔদ্ধত্যের সঙ্গে মাহমুদুর রহমান বলেছিলেন যে, তিনি এই সংবিধানকে গ্রহণ করেন নাক্ষিপ্ত স্বরে তিনি বলেছিলেন, এই সংবিধান বাদ দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবেসম্পাদক হিসেবে ওই সভায় উপস্থিত থাকার সুযোগ আমার হয়েছিলশুধুমাত্র পদবীর বদৌলতে তিনি এই ধরনের উক্তি করেও কোনো বিপর্যয়ের মুখে পড়েননি  ধরা যাক, জামায়াত-বিএনপি জোটের সরকারের আমলে এ ধরনের কোনো মতবিনিময় সভায় ভিন্ন চিন্তার কোনো সম্পাদক এই আচরণের এক-চতুর্থাংশ দেখালেন, সেক্ষেত্রে তার কী পরিণাম হতো! সংসদ ভবনের সীমানার ভেতরেও কি তিনি নিরাপদ বোধ করতেন? কুসাংবাদিকতার এই মূর্তিমান ব্যক্তিটিকে সাহসী সম্পাদক’-এর তকমা দেওয়ার জন্য কী
কারণে এই পনের সম্পাদক এত অধীর হয়ে পড়লেন?
সম্পাদকদের যুক্তবিৃবতি দেওয়ার মতো পরিস্থিতি যখন সৃষ্টি হয়েছিল তখন সবাই আত্মরক্ষায় কিংবা স্বার্থরক্ষায় নিমগ্ন হলেন, আর অপপ্রচার ও মিথ্যার বিষকুম্ভ উপুড় করে সংঘাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করলো যে ব্যক্তিটি- তার পক্ষে মুক্তকচ্ছ হয়ে সবাই নেমে পড়লেন! আমি আমার অর্ধশতাব্দীব্যাপী পেশাগত জীবনে সম্পাদকদের যুক্তবিবৃতি পড়েছি রাষ্ট্রের বিশেষ ক্রান্তিলগ্নেকিন্তু সম্পাদকদের যুক্তবিবৃতির এহেন অপচয় কদাচ দেখেছি বলে মনে পড়ে না
শুরুতেই বলেছি, সম্পাদকদের একটি ফোরামের দরকার আছেএই ফোরামটিকে হতে হবে সৎ সাংবাদিকতার বাতিঘরওই ফোরামই নির্ধারণ করে দেবে একজনের সম্পাদক হতে হলে কী ধরনের পেশাগত অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা থাকা আবশ্যকওই ফোরামের কর্তৃত্বেই নির্ধারিত হবে সাংবাদিকতার মান অপসাংবাদিকতা, কুসাংবাদিকতা কিংবা নৈতিকতাবিবর্জিত সাংবাদিকতাকে নিষিদ্ধ এবং পরিত্যাজ্য করার কাজটি করতে হবে ওই ফোরামকেইওই ফোরাম কথা বলবে দেশ ও জাতির কোনো বিশেষ প্রয়োজনীয় মুহূর্তেসরকার অপেক্ষা করবে ওই ফোরামের পরামর্শের জন্যবিদেশী অতিথিরা অনুরোধ করবে ওই ফোরামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করারকিন্তু এখানে ব্যাপারটি কী হয়ে গেল? আমাদের দেশে সম্পাদকপদটি এতো সুলভ? এত সহজে টাকার বিনিময়ে এটা পাওয়া যায়? ঔদ্ধত্য কি সম্পাদকের ভূষণ? ঔদ্ধত্য মানেই কি ব্যক্তিত্বের বহি:প্রকাশ?
সবশেষে একটি ঘটনার কথা বলিআইয়ুব খানের সামরিক শাসনের গোড়ার দিককার কথাজেনারেল আইয়ুব খানের মার্শাল লতখন দেশে পুরোপুরি জেঁকে বসেছেতার মন্ত্রণাদাতারা তাকে পরামর্শ দিলেন- হুজুর আপনার ক্ষমতা যদি পোক্ত করতে হয় তা হলে সাংবাদিকদের নিয়ে আসতে হবে আপনার হাতের মুঠোয়তিনি জানতে চাইলেন, কীভাবে সেটা করতে হবে? মন্ত্রণাদাতারা উত্তর দিলেন, ‘জনাব, সাংবাদিকদের কোনো বেতন কাঠামো নেই, চাকরির গ্যারান্টি নেইএই কাজটি যদি আপনার সদাশয় সামরিক সরকার করে দেয় তা হলে আপনার শাসনকাল স্বর্ণযুগে পরিণত হবেএই পরামর্শ আইয়ুবের মনে ধরলতিনি পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের সম্পাদকদের সঙ্গে এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক শুরু করলেনতিনি সাংবাদিকদের জন্যে কী কী করেছিলেন, কতখানি অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিধান করেছিলেন, প্রেস ট্রাস্ট গঠন করে কত কৌশলে সাংবাদিকদের ভেতরে সুবিধাভোগী স্তর সৃষ্টি করেছিলেন, কীভাবে গোয়েন্দা সাংবাদিকতা সৃষ্টি করেছিলেন সেসব প্রসঙ্গ এখানে আলোচনা করছি না তোয়াব ভাই, গাফ্ফার ভাই, মূসা ভাই (যদি স্মৃতি তাঁকে বিভ্রান্ত না করে), লোহানী ভাই কিংবা পাকিস্তানে জীবিত আছেন নাকভী ভাইয়া- এঁরা সব জানেনআসল কথা আইয়ুব খানই সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ বেতন কাঠামো  তৈরি করেছিলেনতথ্য বিষয়ে তার মন্ত্রণাদাতা ছিলেন আলতাফ গহরতুখোড় আমলা এবং সাংবাদিকদের প্রতি বিশেষভাবে দুর্বলমানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরী, আবদুস সালামের বেশ ঘনিষ্ঠ মানুষ
আলতাফ গহরকে আইয়ুব খান জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আচ্ছা আলতাফ, সকলের অবস্থান তো ঠিক করলে, এবার বলো তো সরকারের সঙ্গে কোন সামঞ্জস্যপূর্ণ পদ সম্পাদকদের জন্য নির্ধারণ করা যায়? পদমর্যাদায় কী প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, না মন্ত্রী- কোথায় ধরা যাবে?’ আলতাফ গহর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে বলেছিলেন, ‘ইওর এক্সেলেন্সি, ইট শুড বি নেক্সট টু ইওর পজিশনকারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, একজন সম্পাদক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের প্রতিনিধি
সমগ্র উন্নত বিশ্বে পত্রিকার সম্পাদককে এইভাবেই দেখা হয়কোথাও কোনো পত্রিকার সম্পাদক সহজলভ্য নয়, এমনকি ভারত পাকিস্তানেও নয়আর আমাদের দেশে একজন অপসাংবাদিকতার প্রতীক ব্যক্তির পক্ষে পনের সম্পাদকের যুক্তবিবৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হলো সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশের সাংবাদিকতা!
লেখকঃ দেশ বরেণ্য সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা